একটি দেশের সরকারী চাকুরীতে শতকরা ৫৬ শতাংশ কোটাময়। এটা রীতিমত ভয়ংকর একটা তথ্য। এই নিয়ম রিভিউ করে এটিকে খুবই সহনশীল পর্যায়ে আনাটা কতটা জরুরী সেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা। আওয়ামী বাকশালী একনায়ক সরকার অসভ্য ইতরের মত এটিকে আরো নোংরা পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে হাসিনার পালিত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের জন্যই যেন হয়ে উঠছে এই বাংলাদেশ। তার স্তুতি গাইবার জন্য সরকারী চাকুরীতে শুধু ছাত্রলীগের পান্ডারা চাকুরী পাচ্ছে।
মহান মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি ও পুতিদের জন্য ৩০% কোটা বরাদ্দের নিয়ম থাকলেও আমি পালটা প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারি যে মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৩০ লক্ষ কিংবা তারও বেশী শহীদ পরিবার,৪ লক্ষ কিংবা তারও বেশী নির্যাতিত নারীদের পরিবার, মুক্তিযুদ্ধে যান নি কিন্তু সে সময় পাকিস্তানী মিলিটারী ও তাদের সহযোগীদের হাতে পঙ্গু হয়েছেন এমন ব্যাক্তিদের পরিবারের জন্যও কি কোটা বরাদ্দ করা হয়েছিলো? আমি যতদূর জানি যে, না, এমন কোনো কোটা বরাদ্দ নেই। ভুল হলে আমাকে ধরিয়ে দেবেন।
আমি কোটা ক্যাটাগোরিতে জেলা কোটা ও নারী কোটা দেখেছি। এই দুইটি কোটা আমাকে বিষ্মিত করেছে। নারীদের কেন কোটার মধ্যে এনে রাখা হয়েছে? আমার অবজার্ভেশনে এটি নারীদের প্রতি অপমানের সামিল। আমাদের সংবিধানে পরিষ্কারভাবে বলা রয়েছে দেশের সকল নাগরিক সমান অধিকার পাবেন। সকল নারী ও পুরুষ তাঁদের মেধার ভিত্তিতে চাকুরী পাবেন। ইনফ্যাক্ট আমার অবজার্ভেশনে নারীরা পুরুষদের থেকে অনেক বেশী মেধাবী হয়ে থাকেন।
জেলা কোটা কেন থাকবে? এটির ব্যখ্যা কি? পিছিয়ে পড়া জেলা আবার কি? কোন জেলা পিছিয়ে পড়বার জন্য দায় সেক্ষেত্রে কার? এই দায় মেটাতে সরকারী চাকুরীতে ভর্তুকি দিতে হবে কেন?
সরকারী চাকুরী করবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মেধাবী ব্যাক্তিরা। তাঁদের পরীক্ষাও হবে ঠিক তেমনই স্ট্যান্ডার্ডে।
উপজাতি কোটাই বা থাকবে কেন? এটির যৌক্তিকতা কি? সরকারী চাকুরী করতে এলে যে মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট সেটি সম্পূর্ন ফুলফিল করেই তবে একজন ব্যাক্তি সেই লাইনে এসে দাঁড়াবেন। উপজাতিরা যদি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হয়ে থাকে তবে সেই দায় নেবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র। এর ক্ষতিপূরণও দেবে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রকেই জবাব দিতে হবে যে কেন একটি জাতি পিছিয়ে থাকবে, কেন একটি অংশ পিছিয়ে থাকবে। কিন্তু সেটির কাফফারা দেবার জন্য সরকারী চাকুরীর সিটকে আপনি জিম্মি করতে পারেন না।
কোটা পদ্ধতির অনেকগুলো পাল্টা মানে বের করা যায়। এটিকে বলা যায় করুনা, অনুকম্পা, সুবিধা ইত্যাদি। একজন ব্যাক্তি, যিনি মনে করেন তিনি সরকারী চাকুরীর জন্য উপযুক্ত ও সে মেধা তাঁর রয়েছে তিনি কেন অনুকম্পা নেবেন? কেন তিনি অন্যদের থেকে বেশী সুবিধা নেবেন? এটি বরংচ সেই যোগ্য মনে করা ব্যাক্তির জন্য এক ধরনের অপমান।
মহান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এখন যেই সুযোগ সুবিধা রয়েছে সেটি এই চাকুরীর ক্ষেত্রে না বাড়িয়ে অন্য ভাবে দেয়া হোক। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে যেমন এখন পেনশন দেয়া হচ্ছে দরকার হলে পেনশন বাড়িয়ে দেয়া হোক, তাঁর থাকবার জন্য ভালো আবাসন তৈরী করা হোক, তাঁর চিকিৎসার জন্য আরো বেশী সুযোগ ও সুবিধা দেয়া হোক কিন্তু তাঁদের নাতি-পুতিরা যুগের পর যুগ কোটা সুবিধা পাবে এটা আমার বিবেচনায় অন্যায় আবদার।
দেশের জন্য যিনি যুদ্ধ করেছেন তাঁকে এই বাংলাদেশ মাথায় তুলে রাখবে। তাঁকে রাষ্ট্র ব্যাক্তিগতভাবে সকল সুবিধা দিবে। দরকার হলে তাঁর পরিবারের কর্মক্ষম ব্যাক্তির জন্য সহজ শর্তে কিংবা একেবারে মিনিমাম লেভেলের রি-পেইমেন্ট শর্তে ব্যবসার জন্য লোন দিতে পারে সরকার কিন্তু সরকারী চাকুরীতে আসবার জন্য হতে হবে চূড়ান্ত রকমের স্মার্ট, মেধাবী, শিক্ষিত, রুচিসম্পন্ন তথা একেবারে সকল ধরনের যোগ্যতায় পরিপূর্ণ হয়ে।
এই যে আমি এই পদ্ধতির কথা বলছি সেটিও কিন্তু এই মহান মুক্তিযোদ্ধাদের-ই স্বপ্ন। এই দেশটিকে তাঁরা সকলের জন্য করে দিতেই ৯ টি মাস জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যে দেশটিকে গড়বার জন্য তাঁরা যুদ্ধে গেলেন, আহত হলেন, নিহত হলেন, সেই দেশে যদি শুধু ৫৬ পার্সেন্ট কোটা-ই থাকে তবে সেই দেশটি কি করে আগাবে?
একটি দেশের সিভিল প্রশাসন হচ্ছে সেই দেশের মেরুদন্ড। এই লেভেলে যত মেধাবী ব্যাক্তিরা থাকবেন বাংলাদেশ ঠিক ততটা আগাবে। এটা কোনো আবেগের কথা নয়, এটা যুক্তির কথা।
এই যে বর্তমানে যে আন্দোলন চলছে এই আন্দোলনটিকে স্বাধীনতাবিরোধীদের ছেলে মেয়েদের আন্দোলন, এটিকে জামাত-বি এন পির আন্দোলন, এটিকে সরকার পতনের আন্দোলন বলে ক্ষমতাশীন দলের অনেক সমর্থক অভিহিত করছেন। এই টেন্ডেন্সি খুবই ভয়াবহ।
১৯৯৬ সালে তত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে আওয়ামীলীগ, জামায়াত আলাদা আলাদা ভাবে রাজপথে নেমেছিলো। কিন্তু সেদিন যদি সেই আন্দোলনকে বলা হোতো স্বাধীনতাবিরোধীদের আন্দোলন, তাহলে কেমন লাগতো শুনতে? একবার কি সেই প্রোপাগান্ডিস্টরা ভেবে দেখেছেন?
যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলে কিংবা ১০ বারো জন লোক এক সাথে হয়ে প্রতিবাদ করলে এই খুনী সরকারের কেন হাঁটু কাপাকাপি শুরু হয় আমি বুঝতে পারিনা। এই তারুণ্যের এই যৌক্তিক দাবী দাওয়াকে অন্যায় ভাবে ঠেকিয়ে এদের দিকে টিয়ার শেল ছুঁড়ে মারা, এদেরকে গুলি করা কিংবা ছাত্রলীগের মাস্তান দিয়ে এদেরকে ঠেঙ্গানো রীতিমত ইতরামি পর্যায়ের কাজ।
আজকের রাজপথের ছেলেটি সামনের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। এই দেশের জন্য সামনের সময়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। তাঁরা কথা বলবেন বাংলাদেশের হয়ে।
আমি এই আন্দোলনরত সকল প্রতিবাদকারীদের পাশে আছি। তাঁদের দাবী দাওয়ার প্রতি আমি সম্পূর্ণ সহমত ব্যাক্ত করছি।