সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের জীবনে প্রতিনিয়ত দুর্নীতি এবং অনিয়মের মুখোমুখি হচ্ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় গলদ থাকাই দুর্নীতি বাড়ার বড় কারণ । বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির অভিযোগ বেড়েছে। মাঠ পর্যায় থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ বেশি আসছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দুর্নীতির হাজার হাজার অভিযোগ করেছে। এমনকি যারা দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার তাদের পক্ষ থেকে দুদকের প্রতি অভিযোগ করা হয়েছে বহুবার। তাদের অভিযোগ হলো দুদক সর্বদা রাজনৈতিক বিবেচনার প্রশ্ন আছে এমন বড় বড় ইস্যু এড়িয়ে গিয়ে ছোটখাটো বিষয়ে মামলা নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। তবে দুদক তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
মাঠ পর্যায় থেকে প্রতিনিয়ত দুর্নীতির অজস্র অভিযোগ পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দুর্নীতির হাজার হাজার অভিযোগ করছে। তবে মিলছেনা এর প্রতিকার। এছাড়া টিআইবির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ দু’ধাপ এগিয়ে এখন ১৫ নম্বরে অর্থাৎ সূচকে অগ্রগতি হলেও দুর্নীতি দমনে গুণগত কোন পরিবর্তন আসেনি।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যদিও জানানো হয়েছে দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে ব্যাপক অগ্রগতির কথা। তবে বাস্তবচিত্রে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। কেননা এখনো সঠিকভাবে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে সরকারি এবং বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তথা পুরো দেশ জুড়ে দুর্নীতি ভয়াবহ পর্যায়েই রয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০১ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। এরপরে ২০০৬ সালে তৃতীয়, ২০০৭ সালে সপ্তম ও গত বছর ছিল ১৩ তম অবস্থানে।
নানা উদ্যোগ আর দুর্নীতি দমন কমিশন সক্রিয় থাকার পরেও দুর্নীতি প্রতিরোধ কেন করা যাচ্ছে না তার দায় সরকারের উপরেই বর্তাবে। সরকারী বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সেবা গ্রহীতাদের সচেতন হওয়াও অনেক জরুরী।
কেননা সরকারের পক্ষ থেকে যা-ই বলা হোক না কেন দুর্নীতি প্রসঙ্গে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সেই পুলিশ বাহিনীও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তারা মানুষের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ। এছাড়া পুলিশ বাহিনীর পর মানুষের বেশি অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রাজউক, পাসপোর্ট অফিস, আয়কর অফিস কিংবা বিআরটিএর মতো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব সরকারী অফিসগুলোরই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি অফিসগুলোতে কি হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনের কাছ থেকে জানা যায়, রাজউক নিয়ে তার অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। তার কাছ থেকে জানা গেছে, রাজউকে টাকা ছাড়া কোন কাজই হয়না। তার মতো এরকম অনেকেই অহরহ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অথচ সরকারের মুখে সেই একই মুখস্ত বুলি দুর্নীতি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।
মোহাম্মদ সোহেল নামক একজন ব্যক্তিগত গাড়ির চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিআরটিএ তে দালাল ছাড়া কাজ করানোই কঠিন। সরকারের নাকের ডগা দিয়ে সর্বত্রই চলছে ঘুষ বানিজ্য আর দালালির রমরমা ব্যবসা। আর সরকারী আমলারাও এই সুযোগে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। ঘুষের টাকায় তারা টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে খুব সহজেই।
এরপর যদি পাসপোর্ট অফিসগুলোর কথা বলা হয় সেখানেও দেখা যাবে পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হলেও সেখানেও রয়েছে দুর্নীতির চর্চা। কয়েকটি পাসপোর্ট অফিস ঘুরে দেখা যায়, যারা নতুন আবেদনকারী তাদের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশনে বেগ পেতে হয়, ঘুষ দিতে হয় তবেই মেলে পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট। আর ঢাকার বাইরের পাসপোর্ট কার্যালয়গুলো নিয়েও রয়েছে দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ।
অন্য আরেক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, পিরোজপুরে তার তিন আত্মীয়ের পাসপোর্ট করাতে ৩৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এমনকি তার নিজের ও স্ত্রীর পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে আসা পুলিশকে এক হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এছাড়াও দুর্নীতির আরেকটি বড় ক্ষেত্র হলো আয়কর অফিস গুলো, যা উঠে এসেছে একজন আয়কর আইনজীবীর কথায়।
আর এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে এটাই বলাই যায় যে সরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতির মাত্রা ব্যপক এবং ভয়াবহ রকম বিস্তৃত।