রাজনীতিতে সহিংসতা নতুন কিছু নয়, কখনো কখনো রাজনৈতিক আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে এখন যা হচ্ছে, তা রাজনীতিও নয়, রাজনৈতিক সহিংসতাও নয়। স্রেফ ঠান্ডা মাথায় নৃশংসতা। ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ হাসিলের জন্য যার যা প্রয়োজন সে সেই কাজটি করা জায়েজ মনে করেছে এবং তাতে যে জানমালের ক্ষতি হচ্ছে তাতে তাদের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়াও নেই। এতে করেই বোঝা যায় যে আমাদের সমাজ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সর্বোত্র চলছে অসুস্থ রাজনৈতিক চর্চা আর রাজনৈতিক অপকৌশলের সংস্কৃতি।
দেশ ও জনগণের উন্নয়নের নামে সরকার যে রাজনীতি করছে, দেখা যাচ্ছে, তা পুরো দেশকে জর্জরিত করে তুলছে। জনগণের সংবেদনশীলতা নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। এ রকম একটি অসংবেদনশীল ও নৃশংস পরিবেশে যে শিশু-কিশোরেরা বেড়ে উঠছে, তাদের মনোজগতে যে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, তা কোন ধরনের প্রজন্ম তৈরি করবে এই বিষয়টি গভীর উদ্বেগের। দেশ, সমাজ ও মানুষের স্বার্থে এই রাজনৈতিক অপকৌশল ও সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন।
রাজনৈতিক অপকৌশলের কারণে রাজপথে নেই রাজনৈতিক শক্ত প্রতিপক্ষ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দেশের রাজনীতির মাঠ একেবারে নীরব, চুপচাপ। বিরোধী দলের তেমন কোন কার্যক্রম নেই। সীমিত পরিসরে সভা-সেমিনারে রাজনৈতিক বক্তৃতাবাজি ছাড়া সরকারবিরোধী কোনো কর্মসূচি নেই বললেই চলে। এক ধরনের নীরবতা বিরাজ করছে দেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে।
সরকারবিরোধী শিবিরগুলো নানা সময়ে আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও মাঠে নামতে পারেনি। যার কারণে মাঠের রাজনীতিতে নিশ্চিন্তে রয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। তবে এই নীরব পরিস্থিতি তাদের জন্য পুরোপুরি স্বস্তি এনে দিতে পারেনি। তাই এই স্থিতিশীল রাজনীতির মাঠও কঠোর নজরদারিতে রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের সহযোগী সংগঠনসহ তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলটির হাইকমান্ড মনে করছেন, বহির্বিশ্বে কূটনৈতিক তৎপরতা এবং রাজপথে আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিরোধীরা কৌশল বদল করেছে। সামাজিক নানা ইস্যুকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে।
এদিকে দেশের আনাচে-কানাচে, হাটে-বাজারে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, চায়ের আড্ডায় সর্বত্র আলোচনার বিষয়বস্তু হলো—নীরব রাজনীতির এই পরিবেশ কতদিন বহাল থাকবে? এরপর কি হতে যাচ্ছে? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতা একাধিক সভা-সমাবেশ ও আলোচনায় বিরোধী পক্ষের নানা অপতৎপরতার বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নিশ্চুপ থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠ ঠিকই চাঙ্গা করে রাখছে। একের পর এক ইস্যুতে গোটা দেশ ক্ষমতাসীনদের দিকে রাখতে চেষ্টা করছে দলটি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একচেটিয়া জয়, সরকার গঠন ও উপজেলা নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তুলেছে দলটি। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা নানা ইস্যুতে চাঙ্গা থাকলেও কেন্দ্রের নজর সরকারবিরোধী দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর প্রতি। কয়েকমাস আগেও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নানা ধরনের তৎপরতা দেখালেও সাম্প্রতিক সময়ে নীরব রয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিএনপির নীরবতাকে নানা অপকৌশল হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ।
সাম্প্রতিক সময়ে গুজবকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে একটি মহল। নানা ইস্যুতে গুজব রটিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে, যার নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াতের হাত রয়েছে বলে দাবি আওয়ামী লীগ নেতাদের। ডেঙ্গু জ্বর ইস্যু নিয়েও সরকারকে বিব্রত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এ ইস্যুতে জনগণকে এর আগে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে, এমন গুজবে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করে একটি মহল। গুজব ছড়িয়ে কয়েকটি স্থানে সাধারণ মানুষকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটে।