দেশজুড়ে চলছে ত্রাশের রাজত্ব। সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় সব ধরনের অপকর্মে জড়িত হচ্ছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। বীরদর্পে তারা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। তারা যানে যতই তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হোক তাদের কিছুই হবেনা শেষপর্যন্ত। তাদেরকে ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করছে কতিপয় সিনিয়র নেতারা। দেশ কে বা জাতিকে ভালোবেসে নয় তারা শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছে। এখন এমনই অবস্থা দাড়িয়েছে যে দেশজুড়ে সবাই ছাত্রলীগের কর্মী বলে নিজেকে পরিচয় দিচ্ছে।
এখন যদি বলা হয় ভার্সিটি পড়ুয়া একটা ছেলে কেন ছাত্রলীগে যোগদান করবে? ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে কি আদর্শ আছে? আসলে প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। হিসেব করলে দেখা যাবে দেশের ৮৫-৯০ ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রলীগকে দেখতে পারে না। এখন সবার মনে প্রশ্ন জাগবে, কেন দেখতে পারে না? দেখতে না পারার কারণ ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক যত অপকর্ম আছে প্রায় সবগুলোর সাথে জড়িত ছাত্রলীগ। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, মাদকবাণিজ্য, ভর্তিবাণিজ্য, শিক্ষক লাঞ্ছনা, নিয়োগ বাণিজ্য, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর, রামদা, ছুরি, চাপাতি হলে রাখা, গণমাধ্যম কর্মীদের মারধর, ক্যাম্পাস ভাঙচুর, হল ভাঙচুর, হল থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ চুরি, জুয়া, ক্যাম্পাস থেকে বিভিন্ন জিনিস চুরি থেকে শুরু করে সব ন্যাক্কারজনক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বর্তমান ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের নীতি ও আদর্শ বলতে কিছু আছে কিনা সন্দেহ। এরা আসলে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসলীগ, চাঁদাবাজলীগ। প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর অবস্থা এতটা বাজে যে, হলে থাকার মতো কোনও পরিবেশ নেই। হলে সিট দেবে প্রশাসন আর সিটের জন্য দৌড়াতে হয় ছাত্রলীগ নেতার পিছে। এ যেন এক দাসপ্রথা। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ক্যান্টিন নেই। কারণ ক্যান্টিনে খেয়ে তারা টাকা দেয় না, ভয় দেখায়, বলে, আমি ছাত্রলীগ করি। ডাইনিং চলে না। কারণ বাকি খেয়ে টাকা দেয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কাজে ভাগ না পেলেই তারা ভিসি ঘেরাও, শিক্ষকের সামনে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ছাত্র করে নামধারী ছাত্রলীগ। এদের দেখলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভয় পায়। কেউ ব্যক্তিগত খরচে ভবন নির্মান করলেও চা-পানি খাওয়ানোর নামে চাদাঁ দিতে হয় তাদের। না হলে কাজ বন্ধ করে দেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে দেখা যায়, শিবিরের অসংখ্য পোলাপান ছাত্রলীগ হয়ে হলে থাকে। কারণ লীগ করলে টিকে থাকতে পারবে। ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের ব্রেইন ওয়াশ করে হাতে মাদক দিয়ে। আর যে কয়টা ভালো কাজ করে সেগুলোও চাঁদাবাজির টাকা দিয়ে করে। সংগঠনে চেইন অব কমান্ড নাই। কেউ কাউকে কেয়ার করে না। ছাত্রলীগ নেতা হওয়া মানে টাকার বিছানা পাওয়া, বিশাল ক্ষমতা পাওয়া। জুনিয়র কর্মী কিভাবে বেয়াদবি করবে সিনিয়রদের সাথে সেটা শেখায় ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতারা। প্রথম বর্ষের ছেলে মাস্টার্সের ছেলের গায়ে হাত তোলে। এটা কি ধরনের রাজনীতি? আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অনেকের অনেক টাকা। এসব দেখে ছাত্রলীগ নেতারা ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি করে করে। বাজেটের টাকায় ভাগ চায়।
আজ জোর করে ছাত্রলীগ কর্মী বানাতে হয়। কেউ নিজ ইচ্ছায় ছাত্রলীগে যোগ দেয়না। শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগে যোগ দেবে নেতাদের আদর্শ দেখে। সেই আদর্শ কোথায়?
দালাল, দুর্নীতিবাজমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বহু প্রাণের বিনিয়মে আমরা স্বাধীন হয়েছি পাকিস্তানিদের কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিৎ ছাত্রলীগে শুদ্ধি অভিযান চালানোর। আর শাখা কমিটিগুলো দেয়ার সময় সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করে কমিটিতে স্থান দেয়ার। কোনও অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে হবে। দালাল, দুর্নীতিবাজ, কুলাঙ্গারমুক্ত বাংলাদেশ চায় সবাই এসব আদর্শ ও ন্যায়-নীতি বিবর্জিত খুনিলীগ, চাঁদাবাজলীগ ও সসন্ত্রাসীলীগ নয়।