রাজনীতির মূল লক্ষ্য হল জনকল্যাণ অথচ রাজনীতিকরা এসব দিকে যথাযথভাবে দৃষ্টিপাত না করে ক্ষমতার রাজনীতির ব্যাপারেই এখন বেশি আগ্রহী। এদিকে সাধারণ মানুষের বিড়ম্বনা বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পন্যের মূল্য। অথচ এসব ব্যাপারে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সরব নন আমাদের রাজনীতিবীদগণ। ক্ষমতার রাজনীতি তারা আন্দোলন করেন অথচ জনসাধারণের অধিকারের বিষয় নিয়ে তারা মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন।
নানা রকম পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মানুষের আয় বেড়েছে আয়ের ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু তারপরও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে নানা রকম প্রশ্নও আছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে আয়ের তুলনায় অনেক বেশি। মানুষের সঞ্চিত অর্থে হাত পড়ছে এবং আয় বাড়া সত্ত্বেও সমাজে এ জন্য ইতিবাচক প্রভাব যেভাবে পরিলক্ষিত হওয়ার কথা, সেভাবে হচ্ছে না। এর কারণ হলো লাগামহীন বাজারদর। খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের চড়া দাম তাদের বাড়তি আয় খেয়ে ফেলেছে। আর এর সবচেয়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে অতিদরিদ্র মানুষদের ওপর। উন্নয়নের সুফল তারা পাচ্ছে না। বাজারে চাল নিয়ে এরই মধ্যে অন্যরকম চালবাজি হয়েছে। সীমিত আয়ের মানুষের খরচের বড় অংশই চলে যায় চাল কেনায়। গত বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চালের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। আমাদের দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য যখন ভাত, তখন চালের দাম বাড়লে মূল্যস্ম্ফীতি তো বাড়বেই। চালের বাজার দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আছে অশুভ চক্রের মুঠোবন্দি। এ ক্ষেত্রে আড়তদার, মজুদদার, পাইকার এবং অসাধু চাতাল মালিক মিলে যে চক্র গড়ে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিয়ে যত কথাই বলা হোক না কেন, এর সুফল মেলা ভার।
শুধু চালই নয় পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে পেঁয়াজের দাম। প্রতিদিনই এ পণ্যটির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম উঠেছে কোথাও ২৫০ টাকা, আবার কোথাও ২৮০ টাকা কেজি। দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ডাবল সেঞ্চুরি করে ২২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এক দিনের ব্যবধানে বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৫০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সংকট রয়েছে। তাই আপাতত দাম কমার সম্ভাবনা নেই। বরং এভাবে চলতে থাকলে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
শুধু চাল বা পেঁয়াজের দামই নয় চড়েছে বিভিন্ন সবজির দামও। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলুর কেজি ২৫ থেকে ৩০, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০, পটোল ও ভেণ্ডি ৬০, করল্লা ৬০ থেকে ৮০, উস্তা ৬০, বরবটি ৬০ থেকে ৭০, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০, শিম ৬০, কচুর মুখী ৮০ থেকে ১০০, মুলা ৪০ থেকে ৫০, টমেটো ১০০, শসা ১০০ থেকে ১২০, গাজর ৮০ থেকে ১০০, ফুলকপি পিস ৫০ থেকে ৬০ এবং লাউ পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে বাজারে মাছ, ডিম, ফার্মের মুরগি, গরু ও খাসির মাংস আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
বাজারের ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হচ্ছে বিদ্যমান পরিস্থিতি অন্তত সেই ইংিত ই দিচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় বাজারে যাচ্ছেতাই কাণ্ডকীর্তি চালাচ্ছে। একারণেই টিসিবিকে শক্তিশালী করার তাগিদ ইতিমধ্যে বহুবার নানা মহল থেকে এসেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আশানুরূপ কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শুধু যে পণ্যদ্রব্যের দামই বেড়েছে তাই নয়, বেড়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম, পরিবহন ব্যয় এমনকি বাসা ভাড়াও। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পরেছে।