‘তিন তালাক’ সংখ্যালঘু মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার- এটি ভারতীয় সেক্যুলাররা (ঢালাওভাবে সবাই নয়) যেমন সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন, তেমনটা প্রায় সারা বিশ্বেই ইসলামী মৌলবাদীদের দাবীর সঙ্গে মুসলিমদের মৌলিক অধিকারগুলোকে গুলিয়ে ফেলতে দেখা যায়। ভারতে তিন তালাকের পক্ষে যারা দাঁড়িয়েছেন তারা তিন তালাকের নিষ্ঠুর শিকার হওয়া ভারতীয় মুসলিম নারীদের বিপক্ষেই অমানবিক একটি অবস্থান নিয়েছেন। পাকিস্তান-বাংলাদেশের মত মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে আইন করে মৌখিক তিন তালাক প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়েছে মুসলিম নারীদের হেনস্তা হতে রেহাই দিতে।
তিন তালাক ইসলামের একটি বিধি যেখানে বলা আছে একজন মুসলিম পুরুষ ইচ্ছা করলেই তার স্ত্রীকে মুখে তিন তালাক বললেই তার জন্য ঐ নারী হারাম হয়ে যাবে। এজন্য কোন পুরুষকে কোন রকম জবাবদেহিতা বা আত্মগ্লাণিতে ভুগতে হবে না। কার্যত ইসলামী শরীয়ত মুসলিম পুরুষকে বিয়ে নিয়ে পুতুল খেলা লাইসেন্স দিয়েছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান মুসলিম বিবাহ আইনে পুরুষের খামখেয়ালির কথা জেনেই নারীর নিরাপত্তা রক্ষার্থে তালাক প্রথাকে কঠিন আইনী বেড়াজালে ফেলে উপরন্তু সন্তানের খোরপোষ দিতে বাধ্য করিয়ে ইসলামী পুতুল খেলার বিপদ থেকে মুসলিম নারীকে সুরক্ষার চেষ্টা করেছে। এরকম নজির থাকার পরও কোলকাতার মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার মুসলিম মৌলবাদীদের পক্ষালম্বণ করে ‘তিন তালাক’ মুসলিম অধিকার দাবী করেছেন। মমতার মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মিটিংয়ে গিয়ে বলেছেন, ‘আমার স্ত্রী আমার সঙ্গে থাকবেন কিনা, তা আমাকেই ঠিক করতে দিন…’।
মমতার মন্ত্রী কি তবে ভারতীয় অমুসলিম পুরুষদের জন্যও মুসলিমদের অনুরূপ ‘তিন তালাকের’ অধিকার চাইবেন? জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান হবার পর পাকিস্তানে তাদের সংগঠনের নেতাকর্মীদের দ্রুত ইসলামী শরীয়া চালুর জন্য কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছিল। জমিয়তে উলামা পাকিস্তান লাহরে আহমদিয়া (কাদিয়ানী) মুসলিমদের বিরুদ্ধে চলা গণহত্যার জন্য দায়ী। এই সংগঠনটি পুরোপুরি ভারতে ইসলামী শাসন কায়েম করতে গুপ্ত বাসনা লালন করে।
ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে এই সংগঠনটি গঠিতই হয়েছিল এই উদ্দেশ্যে। এরকম একটি সংগঠনের মধ্যযুগীয় নারী নিপীড়নের হাতিয়ার ‘তালাকের’ পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস! এটা নাকি ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের মুসলিম নিপীড়নের বিরোধীতা! অথচ তিন তালাক বাতিল করতে ভারতের মুসলিম নারী সংগঠনগুলো সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছে। সেখানে তৃণমূল তার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে স্রেফ ধর্মীয়ভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন মুসলিমদের ভোট হাতিয়ে নিতে। আর এ জন্য মুসলিম টেররিস্টদেরকে দলের নেতা বানিয়ে কিংবা জমিয়তের মত খিলাফতবাদী ইসলামী সংগঠনের সঙ্গে গলা মেলাতে এতটুকু লজ্জ্বা হয়নি! তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বহুদিনের অভিযোগ ছিল তারা এখানকার ইসলামী টেররিস্টদের আশ্রয় দেন। পার্থ চট্টপাধ্যায় জমিয়তের সভার উপস্থিত হয়ে যে ভাষায় কথা বলেছেন তাতে অভিযোগটাকে আরো পাকাপোক্ত করল…।
সার বিশ্বেই ননমুসলিম সেক্যুলার প্রগতিবাদী শক্তিগুলো মুসলিম মাইনরিটিদের অধিকারের সঙ্গে অসভ্য বর্বর ইসলামপন্থিদের ‘ধর্মীয় অধিকার’ জাতীয় আবদারগুলোর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। এর মধ্য দিয়ে তারা মুসলিমদের সামাজিক জীবনকে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির বদলে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় নিমজ্জিত থাকতেই সহায়তা করে থাকে। যেমন ওপার বাংলায় ইসলামী টেররিস্ট ও খিলাফতবাদীদের মদদ দিয়ে প্রকৃতপক্ষে মুসলিম কমিউনিটির ভবিষ্যত ধ্বংসের সহায়তা করা হচ্ছে। তাদেরকে শুধুমাত্র ভোটের ঘুঁটি ভেবে মমতা বন্দোপাধ্যায় মধ্যযুগীয় বিশ্বাস ও বিধিতে তাদের বেধে রাখতে চান- তাদের পরিবর্তনের ঝুঁকি তিনি নেবন না, উনার প্রয়োজন ভোট! মুসলিম ভোট! কিন্তু মুসলিমরা যেদিন ভোটে বিশ্বাস না করে ‘খিলাফতে’ আস্থা রাখবে তখন আশকারা দেয়া মোল্লাদের সমালানো কঠিন হয়ে যাবে…।