সনু নিগমের বাড়িতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে নিপীড়িত নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের আক্রমণের ভয়ে! ভারতে মোল্লারা কথায় কথায় মাথার দাম হাঁকায়, মাথা ন্যাড়া করার ঘোষণা দেয়, দেশ থেকে পিটিয়ে বের করার হুমকি দেয়- তবু তারা নাকি নিপীড়িত নির্যাতিত সংখ্যালঘু! কল্পনা করুন তো বাংলাদেশের ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত এরকম মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘোষণা করছে! কিংবা পাকিস্তানে কোন হিন্দু পুরোহিত সংখ্যাগরিষ্ঠের কোন প্রতিনিধিকে আক্রমন করার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করছে- কি ঠিক বিশ্বাসযোগ্য লাগছে না- তাই তো? একদমই বেমানান লাগছে, ঠিক না?
ইজরাইল রাষ্ট্রের কথাই ধরুন। গেল নভেম্বরে তাদের পার্লামেন্টে একটা বিল আনা হয় যেটি পাশ হলে ভোররাতে মাইকে আজান বাজিয়ে মানুষের ঘুমের বারোটা বাজানোর ধর্মীয় অধিকার হারাতে পারে ইজরাইলে বসবাসরত মুসলমানরা! ইজরাইলের মসজিদগুলোতে মাইক বাজিয়ে উচ্চ মাত্রায় আজান দেয়া হয়। সেই আজানে ভোররাতে ইজরাইলের অমুসলিম অর্থ্যাৎ ইহুদীদের ঘুমের ব্যাঘাতই শুধু ঘটে তাই নয়, ইউরোপ থেকে ভ্রমণ করতে আসা ইহুদীদের কাছে এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা ঘটে। ভোররাতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মাইকে আজান বাজিয়ে একটা ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করা হয়। অধিকাংশ ইজরাইলির অভিযোগের প্রেক্ষিতে পার্লামেন্টে মাইকে আজান দেয়ার সময় সীমা নিয়ে একটা বিল আনা হয় গেল নভেম্বর মাসে। মজার ব্যাপার হচ্ছে মাইকের আজান বাজিয়ে অমুসলিমদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোটা যে মুসলমানদের পৈত্তিক সম্পত্তি সেটা ইহুদীরাও ভীষণ করে মান্য করে! তাদের পার্লামেন্টে এই বিলের বিরুদ্ধে একজন এমপি তীব্র প্রতিবাদ স্বরূপ নিজেই আজান দেন উচ্চস্বরে। তিনি এই বিল পাশ হলে ইজরাইলে মসজিদের সংখ্যা কমে যাবার আশংকা করেছেন। এমনকি ইজরাইলের প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন এই বিলের বিরুদ্ধতা করেছে কারণ এতে অপপ্রয়োগ ঘটতে পারে…।
ভাবুন তো, সৌদি আরবের বাদশাহ তার দেশে গির্জা প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন কিংবা তাদের ধর্মকর্ম পালনের পক্ষে মত দিচ্ছেন! যাই হোক, যা হবার নয় তা ভেবে লাভ নেই। ইজরাইল কিন্তু আজানের বিরুদ্ধে সরাসরি কোন বিল আনেনি। বিলে সাফ বলে দেয়া হয়েছে, রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে সব ধরনের শব্দ নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞায় মুসলিমদের কেবল ফজরের আজান মাইকে প্রচার বন্ধ হতে পারে। বাকী চার ওয়াক্তের আজান ঠিকই মাইকে দিতে কোন বাধা নেই। ইজরাইল রাষ্ট্রে ইহুদীরা ১৮ শতাংশ মুসলিমকে রেখেছে এবং তাদের মসজিদ বানিয়ে মাইক বাজিয়ে আজান দিতে দিচ্ছে- যদি তারা সমস্ত মুসলিম তাড়িয়ে দিয়ে ইহুদী রাষ্ট্র বানাত তাহলে কে কি যে ছিড়তে পারত তা তো আমাদের জানাই আছে। অথচ সেই ইজরাইলে এরকম একটা বিল আনতে গেলে খোদ ইহুদীরাই বিরোধীতা করছে। তারা বলছে এতে মুসলিমদের প্রতি অপপ্রয়োগ ঘটতে পারে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ইজরাইলকে নিষিদ্ধ করে রেখেছে। বলাই বাহুল্য এর পেছনে ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক ইসলামী ঐতিহ্য ছাড়া যে আর কিছু নেই তাতে কোন সন্দেহ নেই।
জন্মের পর থেকে ইজরাইল রাষ্ট্রটাকে আমাদের সামনে এক ভয়ংকর ইহুদী রাষ্ট্র হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর ইহুদীদের তো জঘন্ন অভিশপ্ত বর্বর ছাড়া আমাদের ভাবতেই শেখানো হয়নি। সেই ইজরাইলে ১৮ শতাংশ আরব নাগরিত্ব সুবিধান লাভ করে যাদের প্রায় সকলেই মুসলমান। ইজরাইলে মসজিদ রয়েছে এবং সেখানে মাইক লাগিয়ে আজান দেয়া হয়। এই হচ্ছে হাদিস বর্ণিত ‘মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু’ ইহুদীদের ‘ইহুদী রাষ্ট্রের’ ধর্মনিরপেক্ষতা। এর বিপরীতে গোটা আরবে যে ক’টা ইসলামী শাসনের দেশ আছে, সেখানে কোন অমুসলিমের ধর্ম পালনের আইনত কোন অধিকার নেই। সেখানে গির্জা, মন্দির তৈরি করার অনুমতি নেই। কোন অমুসলিমকে নাগরিক করা হয় না। ইজরাইলে বসবাসরত ১৮ শতাংশ মুসলিমকে দেশ ত্যাগ করে দেশান্তরিত হতে হয় না। পাশ্ববর্তী মুসলমান দেশে গিয়ে বসবাস করার কথা তারা ভাবনাতেই আনে না। তবু ইজরাইল মুসলমানদের শত্রু! তারা ইসলামের শত্রু। সৌদি আরবকে কিন্তু কখনই অন্যের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকার না দেয়ার জন্য বর্বর- এরকম কথা শুনতে হয় না। সবাই ধরে নিয়েছে মুসলমানদের দেশে তো এমন হবেই! ইসলামী শাসনে অন্য ধর্মালবম্বীদের কোন অধিকার থাকবে না এতে অবাক হবার কি আছে? ইসলাম ধর্মের বিধানই এমনতর। আর মুসলমানদের অধিকার আছে তাদের বিধানকে মান্য করার। যারা এসবের সমালোচনা করে তারাই বরং ইসলামোফোবিয়াতে আক্রান্ত…।
সনু নিগমের বাড়িতে পুলিশ প্রহরা! আচ্ছা তাকে ঠিক কারা হামলা করতে পারে বলেন তো? নিপীড়িত নির্যাতিত অসহায় সংখ্যালঘুদের নিশ্চয় এতখানি সাহস হবে না- তাই না?