কিছু কথা চাপা পড়ে থাকে। সারাজীবন চেষ্টা করেও জানা সম্ভব হয় না। এই যেমন ধরুন কারো কারো দাঁড়ির কথা। রবি দাদুর কেন কি তা জানিনে। এই যে ভাষা প্যাঁচ খেয়ে গেল তাও দাদুর কারণে। তবে আমার চেনা জানা অনেকের মুখে দাঁড়ি গজানোর পেছনে মূল কারণ মুখে অতিরিক্ত দাগ কিংবা “আঁচিল” ওঠা। কিন্তু ক্রমে “আঁচিল” ঢাকা সেই দাঁড়ি অনেক কিছুর অংশ হয়ে ওঠে। কারো জন্যে সংস্কৃতির অংশ, কারো জন্যে সুন্নতের অংশ। অনেকের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে কিন্তু সৌজন্যের খাতিরে দাঁড়ি ধরে টান দেয়া থেকে বিরত থাকলাম।
বাংলাদেশে মৌসুমি এক্টিভিস্ট, মৌসুমি সুশীল, মৌসুমি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের বেশ কদর। এরা জানেন অপর্ণা সেনের মত- ঠিক কোন সময়ে মানুষের এটেনশন ড্র করতে কি করতে হয়, কিংবা মোদির মত “পাঞ্চ পাইন” কিভাবে মারতে হয়। তালি ঠিক সেই জায়গাতেই পড়ে যেখানে পপুলার সুড়সুড়ি দেয়া হয়। বুঝতেই পারছেন- রাজনীতিতেও একই ধারা চলে, তবে এখানে অনেকদিন ধরে অভিনয়ে আছেন তেমনদের কদর বেশী। রাজনীতিবিদরা যে বিদ্যাটা আয়ত্ত করেন তাকে “ডেমাগগি” বলে। মানুষের সমস্যা উস্কে দিয়ে চুল্কানি তৈরি করে সেখানে মলম দেয়ার অভিনয় করা।
এক সপ্তাহের মধ্যেই ভারতের সাথে হওয়া চুক্তি নিয়ে আলোচনা বেমালুম হারিয়ে গেল! সবাই থেমিজ এর ভাস্কর্য সরানো, হেফাজতের সাথে আওয়ামীলীগের ঐক্য, মঙ্গলশোভাযাত্রা, চারুকলায় গরুর তেহারি এসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। এসবের কোন কিছুই নতুন বিষয় নয়। আওয়ামীলীগ শুরু থেকে যে রাজনৈতিক চাল চেলে আসছে এখনো তা-ই চালছে। এদেশে যেহেতু আদর্শভিত্তিক রাজনীতি অনেক আগেই হারিয়ে গেছে, তাই কোন দলকে আলাদা করে সাম্প্রদায়িক কিংবা অসাম্প্রিদায়িক আখ্যা দেয়ার দিনও অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। মোটা দাগে সবাই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে, অতীতেও করেছে। দেশে সংখ্যাগরিস্ট মত বলতে গায়ের জোরে অপকর্ম করায় ঠেকেছে। সবক্ষেত্রে “সংখ্যাগরিস্ট মত” মানেই ভাল কিছু হবে এমন কোন কথা নেই। এই যেমন ধরুন- ডাকাত সন্দেহে কাউকে যখন গ্রামবাসীরা পিটিয়ে হত্যা করে তখন সবাই সঠিক কাজটি করছেন বলেই মনে করেন, কিন্তু আসলেই কি তাই? ক’বছর আগে সাভারে একটি গ্রামের মানুষ ছয়টি ছাত্রকে পিঠিয়ে হত্যা করেছিল। তারা সবাই ঈদের আনন্দ করতে ঘুরতে গিয়েছিল, ডাকাত ছিল না। ডাকাত হলেও পিটিয়ে মারা সঠিক ছিল না। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সব প্রতিষ্ঠানেই পদ্ধতি মেনে চলতে হয়, যেটি এদেশে এখন আর অবশিষ্ট নেই। কেউ যদি হত্যা করেছেন বলেও অভিযোগ আসে, তাকে বিনা বিচারে গাছে ঝুলিয়ে দেয়া যায় না। এসব কখনো মানবেন আর কখনো মানবেন না- এটা হয় না।
এরশাদের অনেক কিছুই আমরা বর্জন করেছি কিন্তু তার চক্রান্ত করে বাংলা নতুন বছর গণনার দিন পালটে দেয়া মেনে নিয়ে বর্ষবরণ করে চলেছি। মৌসুমি শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মীদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না, যারা সারা বছর কাজ করেন তাদের ভাবা উচিত। ফাঁকতালে সারাবছর হাইবারনেশনে থাকা শিল্পীকুল দু’দিন টেলিভিশন দখল করে রাখলেন। বছরের বাকী সময় টকশো শুনতে শুনতে তাদের নিজস্ব ভাবনা বলতে আর কিছু আছে বলে মনে হয়না। এদিকে সুন্দরবন উজাড় করার সমস্ত রকমের অপ-পরিকল্পনা সমাপ্ত। একদল পাগল মানুষ এখনো নিজের খেয়ে দেশের জন্যে ভাবনায় প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। এসপ্তাহেই খুলনায় সুন্দরবন রক্ষার ডাক দিয়ে সমাবেশ আছে- ক’জন জানেন সে সম্পর্কে? কে কত টাকা খেয়ে সুন্দরবনে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করছে সেটা নিয়ে বাতেনি আলাপ কম হয়নি কিন্তু প্রমাণ হাজির করতে দেখা যায়নি কাউকে। এদেশে প্রমাণ নিয়ে অধিকাংশ মানুষ মাথা ঘামান বলেও মনে হয়না। চিলে কান নিয়েছে বলে দিলেই হয়- সবাই হামলে পড়ে।
ছাগল গাছে ধরে না, আমাদের আচরণই বলে দেয়।