দ্বি শব্দটি যেন আমাদের জাতির রক্তে কেমন যেন গ্লুকোজের মত মিশে গেছে। রক্তে গুলুকোজের পরিমান বেড়ে গেলে হয় ডায়াবেটিকস। আজ ডায়াবেটিকসের অবস্থা এমন যে এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। ১৯৪৭ সালে দ্বি জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দুটি জাতির তৈরি হয়েছিলো । তৈরি হয়েছিলো ভারত এবং পাকিস্তান। পাকিস্তানেরও ছিল দুইটা ভাগ। একটা পূর্ব মানে আজকের বাংলাদেশ আর পশ্চিম পাকিস্তান মানে বর্তমান পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তানে ছিল বাঙালিদের বসবাস। আর এই বাঙ্গালিদের কখনওই পশ্চিম পাকিস্তানিরা আপন করে নিতে পারেনি। ফলে শুরু হয় বিভিন্ন ভাবে বাঙ্গালিদের অপমান অপদস্থ হওয়া। অনেক অপমান অপদস্থ হওয়ার পরে ১৯৭১ সেটি থেকে মুক্তি মেলে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। সেখানেও তৈরি হয় দ্বি দলের। একটি মুক্তিযোদ্ধা আর একটি রাজাকার দলের। রাজাকার দলের বিরুদ্ধে বাঙ্গালি জাতি এখনও মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। বাঙ্গালি জাতি যখন রাজাকারের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে চলেছে ঠিক তখনই আর একটা যুদ্ধে আমাদের জড়াতে হচ্ছে। কোটা মুক্ত আন্দোলনে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্যি যে আজ ক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল আওয়ামীলীগ । যে দলের রয়েছে হাতুরিলিগ ও কিছু মুক্তিযোদ্ধার মুখোশ ধারী রাজাকার। আজ যখন আওয়ামীলীগ কোটা মুক্ত আন্দোলনকে বিএনপি জামায়াতের ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করে তখন হতাশ হই। কিছু বিষয় বিশ্লেষণ করা খুব জরুরি এখানে।
আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে ৩০ লক্ষ শহীদের প্রান এবং ৪ লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে । যে সময় মুক্তি যুদ্ধ সংগঠিত হয় তখন এ দেশের লোক সংখ্যা ছিল ৭ কোটি। ৭ কোটি লোকের মধ্যে সকলে সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেনি তা ঠিক । কিন্তু যে ত্রিশ লক্ষ লোক শহিদ হয়েছে তারা নিশ্চয়ই কোন না কোন বাঙালি পরিবারের সদস্য ছিল । ত্রিশ লক্ষ শহীদ নিশ্চয়ই একটি পরিবারের সদস্য ছিল না। যদি প্রতি পরিবার ২ জন করে সদস্য হারায় তাহলে নিশ্চয়ই ১৫ লক্ষ পরিবার তাদের আপনজন হারিয়েছে। এখন এই পরিবার গুলোর দুটি হাত ধরে নেই যার একটি হাত মাতুল বংশের আর একটি হাত পিতৃ বংশের। এভাবে আর ৩০ লক্ষ পরিবার দাঁড়াবে । এভাবে পুরো সাত কোটি লোক সবাই সবার সাথে সম্পর্কিত হয়ে একটি জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। যাদের প্রানের দাবি ছিল একটি সেটি ছিল স্বাধীনতা । যার ফল স্বরূপ মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। যদি পুরো জাতির অধিকার আদায়ের জন্য যুদ্ধ হয় তাহলে এখানে কোটা ধারি কোথা থেকে উদয় হল? তাহলে কি কিছু ব্যক্তি স্বার্থ সিদ্ধির জন্য যুদ্ধ হয়েছিল? নিশ্চয়ই না। তাহলে আজকে যে আন্দোলন হচ্ছে তার কারন টা কি? এই কারন গুলো বলার আগে শেখ মুজিবর রহমানের একটি উক্তি খুব মনে পড়ছে,
“আমাদের বাঙ্গালিদের মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হল ‘আমরা মুসলমান, আর একটা হল আমরা বাঙালি।’ পরশ্রীকাতরতা আর বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধহয় দুনিয়ার কোন ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবেনা, ‘পরশ্রীকাতরতা’। পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয় তাকে ‘পরশ্রীকাতর’ বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন,সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙ্গালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই, ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয়না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে।”
এই পরশ্রীকাতরতা ও বিশ্বাসঘাতকতার জন্ম অনেক আগে থেকেই। তবে এর ব্যাপকতা দেখা যায় ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে । যখন ভাষা আন্দোলন চলছিল তখন একদল মীর জাফর এই বলে খবর উরাচ্ছিল যে কলকাতার দাদারা নাকি ধুতি পরে এদেশে এসে ভাষার জন্য আন্দোলন করে বেড়াচ্ছে। এরপর যখনি এ দেশে কোন আন্দোলন হয়েছে তখনি সেই আন্দোলন কে ভারতের কুট চাল বলে অভিহিত করা হয়েছে। এর পরে ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর এ দেশকে মেধা শুন্য করার জন্য হত্যা করা হয়েছিল বুদ্ধিজীবীদের। এই হত্যাযজ্ঞটি ঘটিয়েছিল এই দেশেরই কিছু মির জাফর। যাদেরকে আমরা রাজাকার বলে থাকি। এরপর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাকের মত মির জাফর দেখা গিয়েছিল। যে কিনা পুরো আওয়ামীলীগ ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। এখনও খন্দকার মোশতাকের মত কিছু মীর জাফর এদেশকে মেধা শুন্য করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কোটা ভিত্তি এই ষড়যন্ত্রেরই একটি উপাখ্যান ।
সাংবাদিক কাজলের মুক্তি ও আমার কিছু ভাবনা
আমাদের প্রজন্মের একজন হতভাগা সাংবাদিক কাজল আজ দীর্ঘ ৯ মাস পর মুক্তি পেলেন। প্রায় নয় মাস আগে সাংবাদিক কাজলকে তাঁর...