ফ্যাসিজমের একটা কাজ হইলো মেজরিটির মনে ত্রাস ছড়ানো, একটা সিজ মেন্টালিটি তৈরী করা। আমরা এই সমাজ-রাষ্ট্রের মেজরিটি বটে, কিন্তু আমরাই আক্রমন আর ষড়যন্ত্রের আসল শিকার/ভিক্টিম, এই ধরনের একটা গল্প বাজারে ছেড়ে ফ্যাসিজমের ক্ষেতে পানি দেওয়ার কাজটা করেন বুদ্ধিজীবী নামের বাটপারকুল।
ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র বা মোদীর ভারতে এইটা স্পষ্টই দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে আমি সাদা চামড়ার বিষমকামী খ্রিস্টান, মেজরিটির অংশ। কিন্তু আমিই আসল ভিক্টিম — আমাকে গিলে খাইতে আসছে যে জুজু সে সমকামী অধিকার আন্দোলনের কর্মী; মেক্সিকোর নোংরা, ক্রিমিন্যাল মাইগ্রেন্ট; নারীবাদী ডাইনী; নাস্তিক শয়তান; মুসলমান সন্ত্রাসী। আবার ভারতে আমি হিন্দিপ্রেমী হিন্দু — সিক্যুলার, প্রগতিষ্টিউটদের অত্যাচারে বহুত পেরেশানীমে হায় এবং মুসলমানলোগ হামারা গরুমাতাকো খায়া ফালতা হায় ইত্যাদি, ইত্যাদি।
আর বাংলাদেশে?
বাংলাদেশে আমি বাঙালি মুসলমান। আমার পেয়ারা নবীর নামে কেউ বাজে কিছু বললে, সমকামীদের অধিকার নিয়ে কেউ কথা বললে, কেউ উল্টা-পাল্টা বই পাবলিশ করলে আমি তাকে রাস্তায়, বাসায়, অফিসে ঢুকে কুপায়া মেরে ফেলি। ইসলাম ধর্ম নিয়া কেউ নয়-ছয় করলে আমি তাকে বাংলাদেশেই থাকতে দেই না — জার্মানী, সুইডেন, নরওয়ে, নেপালে পাঠিয়ে দেই। ইসলাম ধর্ম নিয়া নয়-ছয় করে এমপি-মন্ত্রীরাও এই দেশে পার পায়না। কিন্তু বাংলাদেশে আমিইতো আসল ভিকটিম, নিষ্পেষিত সাবল্টার্ন, ওরিয়েন্টাল সাবজেক্ট! আমার ইসলাম ধর্মইতো আজ নির্মূল হতে চলেছে!
৫-ই মে শহীদ দিবস উপলক্ষে বিশিষ্ট সাধক ফরহাদ মজহার যেমনটি ইরশাদ করেছেন: “… সেই গৌরব ও অর্জনকে জনগণের ধর্ম বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের বিপরীতে স্থাপন করে গড়ে উঠেছে ইসলাম নির্মূলের রাজনীতি। বাঙালি জাতিবাদ, নাস্তিক্যবাদ, সেকুলারিজম, প্রগতিশীলতা, নারীবাদ ইত্যাদি নানান নামে ইসলাম নির্মূলের চর্চা হয়েছে। তাহলে এখন কাজ হচ্ছে এই নির্মূলের রাজনীতির অবসান ঘটানো। বুঝে নিন, দুই হাজার তেরো সালের ৫ মে হচ্ছে যথারীতি শহিদ হয়ে ও রক্ত দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সেই রাজনীতি উদ্বোধনের দিন।”
“বাঙালি জাতিবা[দি]” শাহবাগী ফাঁসিবাদের উত্তরে শাপলা চত্বরে “উদ্বোধন” হয়েছিলো যে হেফাজতী ফ্যাসিবাদের সেটির মূল চরিত্রটি কি তা বুঝতে ফরহাদ মজহার জুজুবুড়ির যে ছবিটি এঁকেছেন সেটি আবার দেখুন: এই জুজুটি নাস্তিক, এই জুজুটি সিক্যুলার, এই জুজুটি প্রগতিষ্টিউট, এই জুজুটি নারীবাদি।
এই জুজুটিকেইতো ২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকার রাস্তায় পিটিয়েছিলেন সাবল্টার্ন বিপ্লবীরা:
এই জুজুটিকেই হাতকড়া পরিয়ে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে ইসলামকে রক্ষা করেছিলো বাংলাদেশ রাষ্ট্র:
এই জুজুটিকে মেরেইতো বাংলাদেশে মেজরিটি মুসলমানের ইসলাম রক্ষার বিপ্লবী রাজনীতি হবে। হেফাজতের ১৩ দফার মূল দফাগুলি বাস্তবায়ন হবে: “কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন” বাতিল হবে; ব্লাসফেমি আইন হবে; নাস্তিক- মুরতাদদের ফাঁসি হবে; “বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ” হবে; “ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল” হবে; আহমদী মুসলমানদের অমুসলিম ঘোষণা করা হবে; “দেশব্যাপী […] ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ” হবে; বাংলাদেশে যে মুসল্লিরা মসজিদে গিয়ে “নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়” করতে পারেননা, সেটার একটা সমাধান হবে।
আর আমরা “ফরহাদ ভাই” কতো বড় বিপ্লবী দার্শনিক সেটা বলবো, তালি দিবো, লাইক দিবো, শেয়ার দিবো। অন্যদিকে, ২০১৩ সালের ৫-ই মে শফি হুজুরের ফুঁসলানিতে রাস্তায় নেমে মারা গেছিলো যে মাদ্রাসার ছাত্রগুলো তাদের নামগুলোও জানবোনা। তবে, ঠিকঠাক আদবের সাথে সালাম দিবো বাংলাদেশের প্রধান বিপ্লবীকে।